এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবিহ নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবিহ নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবিহ নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবিহ নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
তারাবি নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।)
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
রোজা
পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। রোজা তার মধ্যে একটি।
পবিত্র রমজান মাসের পুরো একটি মাস রোজা রাখা ধনি-দারিদ্র নির্বিশেষে সকল
মুসলমানের ওপর ‘ফরজ’ বা অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে।
আল্লহ পাকের উদ্দেশ্য করনীয় অন্যান্য ‘ফরজ’ সমূহের তুলনায় রোজার গুরত্ব সর্বাধিক। কারন আর সব ফরজের মধ্যে বান্দার কিছু না কিছু বেক্তিগত স্বার্থ নিহিত থাকে, কিন্তু রোজা ‘খাছ’ আল্লহরই উদ্দেশ্য।
এ সম্পর্কে কুরআন পাকে বলা হয়েছে- ‘আদম সন্তানের নেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সাত গুন পর্যন্ত দেওয়া হবে; কিন্তু রোজার বেপারে তেমন নয়। রোজা খাছ আমার জন্য। রোজাদার কেবল আমার খুশির জন্য কামনা,বাসনা ও পানাহার ত্যাগ করে রোজা রাখা। সেজন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।’
আগেই বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসের পুরো এক মাসই রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ‘ফরজ’ করা হয়েছে। কয়েকটি বিশেষ কারণে এ মাসের এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
১. এ মাসের ১০ তারিখে হজরত ইব্রাহীমের আ.-এর ওপর ‘ছহিফা’ শরিফ নাজিল হয়।
২. এ মাসের ১৩ তারিখে হজরত ইসার আ.-এর ওপর ‘ইঞ্জিল’ শরিফ নাজিল হয়।
৩. এ মাসের ১৮ তারিখে হজরত দাউদের (আ.) ওপর ‘যবুর’ শরিফ নাজিল হয়।
৪. সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল- কুরআন নাযিল হয় হজরত মুহাম্মাদের সা.- এর ওপর এ মাসের ২৭ তারিখে। অতএব দেখা যায় যে, প্রায় সবগুলো আসমানী কিতাবই নাযিল হয়েছে এই পবিত্র রমজান মাসেই। তাই এ মাসের গুরুত্ব অত্ত্যধিক। এ মাসের ‘নফল’ নামাজ অন্য মাসের ‘ফরজ’ নামাজের সমান। এ মাসের একটি ‘ফরজ’ নামাজ অন্য মাসের ৭০টি ‘ফরয’ নামাজের সমান।
রোজার আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এর উপকারিতা শুধুমাত্র একটি নয়- পরলৌকিক ও ইহলৌকিক দুটোই।
পরলৌকিক
১. রোজাদারের আল্পক্ষণের সাধনা অনেক বেশী সাওয়াবের। রোজাদারের শুধুমাত্র সৎকর্ম নয়, কুরআন পাকে বলা হয়েছে- ‘ রোজাদারের নিদ্রা তার এবাদতের তুল্য।’ তা হলে দেখা যাচ্ছে,একজন রোজাদার সামান্যমাত্র আয়াসে মাত্র একটি মাসে যত বেশি ছাওয়াব লাভ করতে পারে,কঠোর সাধনা করে সারাটা বছর ধরেও তা পারে, অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য রমজান একটি পরম নিয়ামতের মাস।
২. রোজাদারের শুধুমাত্র কর্ম অ চিন্তা নয়, তার দেহের প্রতিটি অঙ্গই পবিত্রতা লাভ করে। তার গোটা দেহটাই যেন পরিণত হয় একটি পবিত্র সাধনার আলয়ে। তার দেহের প্রতিটি অনুই আল্লাহর কাছে পরম প্রিয়। এমন কি রোজাদারের মুখের গন্ধ পর্যন্ত আল্লহ পাকের কাছে কস্তুরীথেকেও সুগন্ধি ও মনোরম বলে হাদিসে-পাকে উল্লেখিত হয়েছে।
৩. রোজাদারের আরোএকটিবড় সৌভাগ্য এই যে, সে তার অতীতের কৃত সর্বপ্রকার গুণহ থেকে মুক্তি লাভ করে। রোজা অতীতের সব রকম কালিমাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে তাকে দান করে এক প্রবিত্রতম শান্তির ঐশ্বর্য্য।
৪.আল্লাহ পাকের লক্ষ কোটি অতুলনীয় এবং অসীম গুণাবলীর মধ্যে কোনও একটির পরিপূর্ণ অধিকার হওয়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভাব নয়। কিন্তু একমাত্র রোজাদারই সেই পরম সৌভাগ্যটির নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। আল্লহ পাকের পানাহারমুক্ত। রোজাদার একটি মাসে দিনের বেলাতে পানাহারমুক্ত থেকে স্রষ্টারনৈকট্যলাভকরেথাকে। সৃষ্টির এমনি ত্যাগ সাধনাতে স্রষ্টা বড়ই খুশি হন।
৫.বেহেস্তে প্রবেশের আটটি দরজা রয়েছে। এ গুলোর মধ্যে ‘রাইয়ান’ দরজাটি সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ। আর এই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে শুধুমাত্র রোজাদাররাই। অর্থাৎ শুধুমাত্র রোজাদারদের জন্যই এই দরজাটি সংরক্ষিত রয়েছে। এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য রোজাদারদের আর কি হতে পারে?
৬.রোজাদারের প্রতি ফেরেশতাগণও কৃপাবান থাকেন। এ সময় তাঁরা রোজাদারদের সর্বপাপ মুক্তির জন্য দু’হাত তুলে আলহ পাকের নিকট দোয়া চাইতে থাকেন এবং আলহ পাক ফেরেস্তাগনের সম্মান রক্ষা করেন। অর্থাৎ রোজার সাহায্যে রোজাদার শুধুমাত্র নিজের পথই আলোকিত করে না, তার চলার পথের সাহায্যকারী বন্ধুকেও খুজে পায়।
৭.কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য রোজা শাফায়েতকারীর কাজ করবে। রোজার পরম বন্ধু রোজাদার। তাই বন্ধুর মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই শান্তি পাবে না।বন্ধুর শাফায়েতের জন্য অবিস্রান্তভাবে সে করুণাময়ের কাছে নিবেদন করতে থাকবে। রোজার অসংখ্য পারলৌকিক নিয়ামতের মধ্যে মাত্র কয়েকটির আলচনা করা হল। এবার আমরা দেখবো,এর কি কি ইহলৌকিক বা পার্থিব উপকার রয়েছে –
ইহলৌকিক
১.মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে রোজা বিশেষভাবে সাহায্য করে। মিথ্যাকথন, গীবত, হিংসা, আত্মম্ভ্ররিতা বোধ ইত্যাদি অসৎ স্বভাবগুলো রোজাদারের বিশেষভাবে পরিত্যাজ্য। প্রকিত রোজাদার এসব বদ স্বভাব হতে দূরে থেকে মহৎ চরিত্র গঠন করে নিতে সমর্থ হয়।
২.রোজা দরিদ্র লোকদের প্রতি ধনীলোকদের সমবেদনাবধ জাগাতে সহায়তা করে। নানাবিধ প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করেও ধনীরা দরিদ্রের ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভাব করতে পারেনা। কিন্তু শুধুমাত্র রোজার মাধ্যমেই ধনীরা তা অনুভাব করতে সক্ষম হয়। এমন করেই তাদেরও হৃদয়ে দরিদ্রের প্রতি একটা স্বাভাবিক সহানুভূতিবোধ জাগরিত হয়।
৩. রোজা মানুষকে ফাঁকি দেওয়ার অভ্যাস থেকে দূরে রাখে। রোজাদার ইচ্ছা করলে লোকচক্ষুর অন্তরালে যেয়ে অনেক কিছু পানাহার করতে পারে। কিন্তু সে তা করে না। কারন সে উপলব্ধি করতে পারে যে,অপরকে ফাঁকি দিতে ইচ্ছা করলে নিজেই ফাঁকির শিকার হতে হয়।
৪. রোজা মানুষকে ধৈর্য, সংযম ইত্যাদি মহৎ গুণাবলী শিক্ষা দেয়। অনেক সংযমতার সাথে সে রোজার নিয়ামবলি পালন করে এবং ইফতারীর মুহূর্ত পর্যন্ত আহার সামগ্রী সম্মুখে নিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে সময় হওয়ার পূর্বে তা ভক্ষণ করে না। এমনিকরে রোজা মানুষের লোভী স্বভাব দূর করে।
৬. রোজা মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে। কোন প্রানী যতদিন পর্যন্ত বাড়তে থাকে, ততদিন বার্ধক্য আসে না। বাড়া বন্ধ হয়ে গেলেই দেহের মধ্যস্থিতযন্ত্র সমূহের ক্ষয় শুরু হয় এবং মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়। তাই দেহের বৃদ্ধিসাধন ধীরে ধীরে হওয়াই মঙ্গলজনক। একমাসের রোজা বা উপবাস দেহের এই ধীরবর্ধনে সহায়তা করে। এই তথ্যটি চিকিৎসাশাস্ত্রে স্বীকৃত।
৭. রোজা বেশ কিছু যন্ত্রণাদায়ক রোগের নিয়ামক। এক মাসের রোজা মানুষের দেহের মধ্যকার দুর্বল হৃৎপিণ্ড, রক্ত চলাচল, যকৃত প্রভৃতিকে সবল ও সতেজ করে তোলে। একটা ফুসফুসের পুরানো দুরারোগ্য ‘কফ’ দূর করে। তাছাড়া বহুমূত্র রোগীদেরও পক্ষে রোজা বিশেষ উপকারী । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন – যারা নিয়মিত ভাবে রোজা পালন করে, সাধারনতঃ তাঁরা বাত, বহুমূত্র , অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন না।
এছাড়া রোজার আরও বহুবিধ পার্থিব উপকারও রয়েছে। মাত্র কয়েকটির আলোচনা করা গেলো।
রোজা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এক পরম নিয়ামত। আলহ পাক বলেছেন- ‘আনতাছুম খায়রুল লাকুম ইনকুনতুম লা’তামুন।’– অর্থাৎ রোজার যে কি উপকার তা যদি তোমরা জানতে! এর উভয়বিধ ফজীলত মুসলমানদের কাছে এক সীমাহীন শান্তি ও পুরষ্কার স্বরূপ।
রোজার এই বিশেষ নিয়ামত আলহ পাক বলেছেন- ‘রোজাদারদের জন্য আমি দুইটা পুরষ্কার রেখেছি, একটা পৃথিবীতে এবং অপরটা মৃত্যুর পরে।’ কিন্তু এই রোজা বলতে আমরা কি বুঝি? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করলে কি রোজা পালন করা হল? না, তা হয় না। উপবাস ত সবাই করতে পারে। এর মধ্যে কোনও বাহাদুরী নেই।
রোজার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সাওম’, যার বাংলা অর্থ ‘বিরত থাকা’। রোজাদারদের বিরত থাকতে হবে সর্বপ্রকার পার্থিব লোভ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ প্রভ্রতি কু-অভ্যাস থেকে।
রোজাদার যদি এ দোষগুলো বর্জন করতে না পারে, তবে তার সে লোক দেখানো রোজা কোনই কাজে আসবে না। বরং তা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলে করীম সা. বলেছেন- ‘যে রোজাদার মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ ছাড়তে পারে না, তার রোজা আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।’
হজরত আলী (রা.) বলেছেন –‘ একদিকে উপবাস, অন্যদিকে পাপকাজ ও সংযমহীন জীবনযাপন এরূপ রোজার স্থান ইসলামে নেই।
উপবাস এর রোজা এক নয়।’ যতক্ষণ পর্যন্ত রোজাদার লোভ, হিংসা, ক্রোধ প্রভতিপার্থিব কু-অভ্যাসগুলো থেকে মুক্ত হতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার রোজা কোনই কাজে আসবে না।
তাই আমাদের প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য- যাতে আমরা প্রকিত রোজাদারের গুণাবলী লাভ করে ধন্য হতে পারি, তারজন্য আপ্ররান চেষ্টা করা। যখনই আমাদের এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে, শুধু তখনই আমরা আল্লাহ পাকের এই পবিত্র নিয়ামতের সৌভাগ্যবান অধিকারী হতে পারবো। তখনই ধন্য হবে আমাদের মানব জীবন। সার্থক হবে আমাদের সকলের ইহকালীন ও পরকালীন জীবন।
আল্লহ পাকের উদ্দেশ্য করনীয় অন্যান্য ‘ফরজ’ সমূহের তুলনায় রোজার গুরত্ব সর্বাধিক। কারন আর সব ফরজের মধ্যে বান্দার কিছু না কিছু বেক্তিগত স্বার্থ নিহিত থাকে, কিন্তু রোজা ‘খাছ’ আল্লহরই উদ্দেশ্য।
এ সম্পর্কে কুরআন পাকে বলা হয়েছে- ‘আদম সন্তানের নেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সাত গুন পর্যন্ত দেওয়া হবে; কিন্তু রোজার বেপারে তেমন নয়। রোজা খাছ আমার জন্য। রোজাদার কেবল আমার খুশির জন্য কামনা,বাসনা ও পানাহার ত্যাগ করে রোজা রাখা। সেজন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।’
আগেই বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসের পুরো এক মাসই রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ‘ফরজ’ করা হয়েছে। কয়েকটি বিশেষ কারণে এ মাসের এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
১. এ মাসের ১০ তারিখে হজরত ইব্রাহীমের আ.-এর ওপর ‘ছহিফা’ শরিফ নাজিল হয়।
২. এ মাসের ১৩ তারিখে হজরত ইসার আ.-এর ওপর ‘ইঞ্জিল’ শরিফ নাজিল হয়।
৩. এ মাসের ১৮ তারিখে হজরত দাউদের (আ.) ওপর ‘যবুর’ শরিফ নাজিল হয়।
৪. সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল- কুরআন নাযিল হয় হজরত মুহাম্মাদের সা.- এর ওপর এ মাসের ২৭ তারিখে। অতএব দেখা যায় যে, প্রায় সবগুলো আসমানী কিতাবই নাযিল হয়েছে এই পবিত্র রমজান মাসেই। তাই এ মাসের গুরুত্ব অত্ত্যধিক। এ মাসের ‘নফল’ নামাজ অন্য মাসের ‘ফরজ’ নামাজের সমান। এ মাসের একটি ‘ফরজ’ নামাজ অন্য মাসের ৭০টি ‘ফরয’ নামাজের সমান।
রোজার আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এর উপকারিতা শুধুমাত্র একটি নয়- পরলৌকিক ও ইহলৌকিক দুটোই।
পরলৌকিক
১. রোজাদারের আল্পক্ষণের সাধনা অনেক বেশী সাওয়াবের। রোজাদারের শুধুমাত্র সৎকর্ম নয়, কুরআন পাকে বলা হয়েছে- ‘ রোজাদারের নিদ্রা তার এবাদতের তুল্য।’ তা হলে দেখা যাচ্ছে,একজন রোজাদার সামান্যমাত্র আয়াসে মাত্র একটি মাসে যত বেশি ছাওয়াব লাভ করতে পারে,কঠোর সাধনা করে সারাটা বছর ধরেও তা পারে, অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য রমজান একটি পরম নিয়ামতের মাস।
২. রোজাদারের শুধুমাত্র কর্ম অ চিন্তা নয়, তার দেহের প্রতিটি অঙ্গই পবিত্রতা লাভ করে। তার গোটা দেহটাই যেন পরিণত হয় একটি পবিত্র সাধনার আলয়ে। তার দেহের প্রতিটি অনুই আল্লাহর কাছে পরম প্রিয়। এমন কি রোজাদারের মুখের গন্ধ পর্যন্ত আল্লহ পাকের কাছে কস্তুরীথেকেও সুগন্ধি ও মনোরম বলে হাদিসে-পাকে উল্লেখিত হয়েছে।
৩. রোজাদারের আরোএকটিবড় সৌভাগ্য এই যে, সে তার অতীতের কৃত সর্বপ্রকার গুণহ থেকে মুক্তি লাভ করে। রোজা অতীতের সব রকম কালিমাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে তাকে দান করে এক প্রবিত্রতম শান্তির ঐশ্বর্য্য।
৪.আল্লাহ পাকের লক্ষ কোটি অতুলনীয় এবং অসীম গুণাবলীর মধ্যে কোনও একটির পরিপূর্ণ অধিকার হওয়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভাব নয়। কিন্তু একমাত্র রোজাদারই সেই পরম সৌভাগ্যটির নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। আল্লহ পাকের পানাহারমুক্ত। রোজাদার একটি মাসে দিনের বেলাতে পানাহারমুক্ত থেকে স্রষ্টারনৈকট্যলাভকরেথাকে। সৃষ্টির এমনি ত্যাগ সাধনাতে স্রষ্টা বড়ই খুশি হন।
৫.বেহেস্তে প্রবেশের আটটি দরজা রয়েছে। এ গুলোর মধ্যে ‘রাইয়ান’ দরজাটি সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ। আর এই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে শুধুমাত্র রোজাদাররাই। অর্থাৎ শুধুমাত্র রোজাদারদের জন্যই এই দরজাটি সংরক্ষিত রয়েছে। এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য রোজাদারদের আর কি হতে পারে?
৬.রোজাদারের প্রতি ফেরেশতাগণও কৃপাবান থাকেন। এ সময় তাঁরা রোজাদারদের সর্বপাপ মুক্তির জন্য দু’হাত তুলে আলহ পাকের নিকট দোয়া চাইতে থাকেন এবং আলহ পাক ফেরেস্তাগনের সম্মান রক্ষা করেন। অর্থাৎ রোজার সাহায্যে রোজাদার শুধুমাত্র নিজের পথই আলোকিত করে না, তার চলার পথের সাহায্যকারী বন্ধুকেও খুজে পায়।
৭.কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য রোজা শাফায়েতকারীর কাজ করবে। রোজার পরম বন্ধু রোজাদার। তাই বন্ধুর মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই শান্তি পাবে না।বন্ধুর শাফায়েতের জন্য অবিস্রান্তভাবে সে করুণাময়ের কাছে নিবেদন করতে থাকবে। রোজার অসংখ্য পারলৌকিক নিয়ামতের মধ্যে মাত্র কয়েকটির আলচনা করা হল। এবার আমরা দেখবো,এর কি কি ইহলৌকিক বা পার্থিব উপকার রয়েছে –
ইহলৌকিক
১.মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে রোজা বিশেষভাবে সাহায্য করে। মিথ্যাকথন, গীবত, হিংসা, আত্মম্ভ্ররিতা বোধ ইত্যাদি অসৎ স্বভাবগুলো রোজাদারের বিশেষভাবে পরিত্যাজ্য। প্রকিত রোজাদার এসব বদ স্বভাব হতে দূরে থেকে মহৎ চরিত্র গঠন করে নিতে সমর্থ হয়।
২.রোজা দরিদ্র লোকদের প্রতি ধনীলোকদের সমবেদনাবধ জাগাতে সহায়তা করে। নানাবিধ প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করেও ধনীরা দরিদ্রের ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভাব করতে পারেনা। কিন্তু শুধুমাত্র রোজার মাধ্যমেই ধনীরা তা অনুভাব করতে সক্ষম হয়। এমন করেই তাদেরও হৃদয়ে দরিদ্রের প্রতি একটা স্বাভাবিক সহানুভূতিবোধ জাগরিত হয়।
৩. রোজা মানুষকে ফাঁকি দেওয়ার অভ্যাস থেকে দূরে রাখে। রোজাদার ইচ্ছা করলে লোকচক্ষুর অন্তরালে যেয়ে অনেক কিছু পানাহার করতে পারে। কিন্তু সে তা করে না। কারন সে উপলব্ধি করতে পারে যে,অপরকে ফাঁকি দিতে ইচ্ছা করলে নিজেই ফাঁকির শিকার হতে হয়।
৪. রোজা মানুষকে ধৈর্য, সংযম ইত্যাদি মহৎ গুণাবলী শিক্ষা দেয়। অনেক সংযমতার সাথে সে রোজার নিয়ামবলি পালন করে এবং ইফতারীর মুহূর্ত পর্যন্ত আহার সামগ্রী সম্মুখে নিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে সময় হওয়ার পূর্বে তা ভক্ষণ করে না। এমনিকরে রোজা মানুষের লোভী স্বভাব দূর করে।
৬. রোজা মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে। কোন প্রানী যতদিন পর্যন্ত বাড়তে থাকে, ততদিন বার্ধক্য আসে না। বাড়া বন্ধ হয়ে গেলেই দেহের মধ্যস্থিতযন্ত্র সমূহের ক্ষয় শুরু হয় এবং মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়। তাই দেহের বৃদ্ধিসাধন ধীরে ধীরে হওয়াই মঙ্গলজনক। একমাসের রোজা বা উপবাস দেহের এই ধীরবর্ধনে সহায়তা করে। এই তথ্যটি চিকিৎসাশাস্ত্রে স্বীকৃত।
৭. রোজা বেশ কিছু যন্ত্রণাদায়ক রোগের নিয়ামক। এক মাসের রোজা মানুষের দেহের মধ্যকার দুর্বল হৃৎপিণ্ড, রক্ত চলাচল, যকৃত প্রভৃতিকে সবল ও সতেজ করে তোলে। একটা ফুসফুসের পুরানো দুরারোগ্য ‘কফ’ দূর করে। তাছাড়া বহুমূত্র রোগীদেরও পক্ষে রোজা বিশেষ উপকারী । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন – যারা নিয়মিত ভাবে রোজা পালন করে, সাধারনতঃ তাঁরা বাত, বহুমূত্র , অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন না।
এছাড়া রোজার আরও বহুবিধ পার্থিব উপকারও রয়েছে। মাত্র কয়েকটির আলোচনা করা গেলো।
রোজা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এক পরম নিয়ামত। আলহ পাক বলেছেন- ‘আনতাছুম খায়রুল লাকুম ইনকুনতুম লা’তামুন।’– অর্থাৎ রোজার যে কি উপকার তা যদি তোমরা জানতে! এর উভয়বিধ ফজীলত মুসলমানদের কাছে এক সীমাহীন শান্তি ও পুরষ্কার স্বরূপ।
রোজার এই বিশেষ নিয়ামত আলহ পাক বলেছেন- ‘রোজাদারদের জন্য আমি দুইটা পুরষ্কার রেখেছি, একটা পৃথিবীতে এবং অপরটা মৃত্যুর পরে।’ কিন্তু এই রোজা বলতে আমরা কি বুঝি? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করলে কি রোজা পালন করা হল? না, তা হয় না। উপবাস ত সবাই করতে পারে। এর মধ্যে কোনও বাহাদুরী নেই।
রোজার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সাওম’, যার বাংলা অর্থ ‘বিরত থাকা’। রোজাদারদের বিরত থাকতে হবে সর্বপ্রকার পার্থিব লোভ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ প্রভ্রতি কু-অভ্যাস থেকে।
রোজাদার যদি এ দোষগুলো বর্জন করতে না পারে, তবে তার সে লোক দেখানো রোজা কোনই কাজে আসবে না। বরং তা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলে করীম সা. বলেছেন- ‘যে রোজাদার মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ ছাড়তে পারে না, তার রোজা আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।’
হজরত আলী (রা.) বলেছেন –‘ একদিকে উপবাস, অন্যদিকে পাপকাজ ও সংযমহীন জীবনযাপন এরূপ রোজার স্থান ইসলামে নেই।
উপবাস এর রোজা এক নয়।’ যতক্ষণ পর্যন্ত রোজাদার লোভ, হিংসা, ক্রোধ প্রভতিপার্থিব কু-অভ্যাসগুলো থেকে মুক্ত হতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার রোজা কোনই কাজে আসবে না।
তাই আমাদের প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য- যাতে আমরা প্রকিত রোজাদারের গুণাবলী লাভ করে ধন্য হতে পারি, তারজন্য আপ্ররান চেষ্টা করা। যখনই আমাদের এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে, শুধু তখনই আমরা আল্লাহ পাকের এই পবিত্র নিয়ামতের সৌভাগ্যবান অধিকারী হতে পারবো। তখনই ধন্য হবে আমাদের মানব জীবন। সার্থক হবে আমাদের সকলের ইহকালীন ও পরকালীন জীবন।
রোযা ভঙ্গকারী ১৪ টি কারণ
[১]. পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়; যদি রোযাদার হবার কথা সরণ থাকে (রদ্দুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৫)
[২]. হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়, যদিও নিজের ধারণায় কন্ঠনালী পর্যন্ত পৌছেনি।
(বাহারে শরীআত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৭) [৩]. পান কিংবা নিছক তামাক খেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। যদিও আপনি সেটার পিক বারংবার ফেলে থাকেন। কারণ, কন্ঠনালীতে সেগুলার হালকা অংশ অবশ্যই পৌছে থাকে।(প্রাগুক্ত) [৪]. চিনি ইত্যাদি, এমন জিনিষ, যা মুখে রাখলে গলে যায়, মুখে রাখলো আর থুথু গিলে ফেললো এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে গেল।(প্রাগুক্ত) [৫]. দাঁতগুলোর মধ্যেভাগে কোন জিনিষ ছোলা বুটের সমান কিংবা তদপেক্ষা বেশি ছিল।তা খেয়ে ফেললো। কিংবা কম ছিল; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পূনরায় খেয়ে ফেললো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়য়, পৃ-৩৯৪) [৬]. দাঁত থেকে রক্ত বের হয় তা কন্ঠনালীর নিচে গেলো। আর রক্ত থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অতবা কম ছিলো, কিন্তু সেটার স্বাদ অনুভুত হলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং যদি কম ছিলো আর স্বাদও কন্ঠে অনুভুত হয়নি, তাহলে এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গবে না।
(দুররে মুখতার, খন্ড,রদ্দুল মুখতার, খন্ড -৩য়য়,পৃ-৩৬৮) [৭]. রোযার কথা সরণ থাকা সত্ত্বেও ‘ঢুস'(*) নিলো, কিংবা নাকেরে ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪) [৮]. কুল্লী করছিলো । অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কন্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলো। কিংবা নাকে পানি দিলো; কিন্তু তা মগজে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি রোযাদার হবার কথা ভুলে গিয়ে থাকে, তবে রোযা ভাঙ্গবে না।যদিও তা ইচ্ছাকৃত হয়। অনুরুপভাবে রোযাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কন্ঠে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।(আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৭৮)। [৯]. ঘুমান্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললো, অথবা মুখ খোলা ছিলো; পানির ফোঁটা কিংবা বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি কন্ঠে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল-জাওয়াহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম,পৃ-১৭৮)। [১০]. অন্য কারো থুথু গিলে ফেললো। কিংবা নিজেরই থুথু হাতে নেয়ার পর গিলে ফেললো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩) [১১]. যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতরে মওজুদ থাকে। তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না। বারংবার থুথু ফেলতে থাকা জরুরী নয়। [১২]. মুখে রঙ্গিন সূতা ইত্যাদি রাখার ফলে থুথু রঙ্গিন হয়ে গেলো। তার পর ওই রঙ্গিন থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম,পৃ-২০৩) [১৩]. চোখের পানি মুখের ভিতরে চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললেন। যদি এক/দু’ ফোটা হয় তবে রোযা ভাঙ্গবে না। আর যদি বেশি হয়। যারফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভুত হয়। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ঘামেরও একই বিধান। (আলমগীরী, খন্ড-১ পৃ-২০৩)। [১৪]. মলদ্বার বের হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় বিধান হচ্ছে, তখন ভাল করে কোন কাপর ইত্যাদি দিয়ে তা মুছে পেলার পর দাঁড়াবে যাতে সিক্ততা বাকী না থাকে। আর যদি কিছু পানি অবশিষ্ট ছিলো, আর দাঁড়িয়ে গেলো, যার কারণে পানি ভিতরে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এ কারণে সম্মানিত ফকীহগণ (রাহিমুল্লাহু তা’আলা) বলেন, “রোযাদার পানি ব্যবহারের সময় নিবে না। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪)।
পবিত্র মাহে রমজানের সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি :-
আসতেছে অপেক্ষা করুন ২০২০
(বাহারে শরীআত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৭) [৩]. পান কিংবা নিছক তামাক খেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। যদিও আপনি সেটার পিক বারংবার ফেলে থাকেন। কারণ, কন্ঠনালীতে সেগুলার হালকা অংশ অবশ্যই পৌছে থাকে।(প্রাগুক্ত) [৪]. চিনি ইত্যাদি, এমন জিনিষ, যা মুখে রাখলে গলে যায়, মুখে রাখলো আর থুথু গিলে ফেললো এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে গেল।(প্রাগুক্ত) [৫]. দাঁতগুলোর মধ্যেভাগে কোন জিনিষ ছোলা বুটের সমান কিংবা তদপেক্ষা বেশি ছিল।তা খেয়ে ফেললো। কিংবা কম ছিল; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পূনরায় খেয়ে ফেললো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়য়, পৃ-৩৯৪) [৬]. দাঁত থেকে রক্ত বের হয় তা কন্ঠনালীর নিচে গেলো। আর রক্ত থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অতবা কম ছিলো, কিন্তু সেটার স্বাদ অনুভুত হলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং যদি কম ছিলো আর স্বাদও কন্ঠে অনুভুত হয়নি, তাহলে এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গবে না।
(দুররে মুখতার, খন্ড,রদ্দুল মুখতার, খন্ড -৩য়য়,পৃ-৩৬৮) [৭]. রোযার কথা সরণ থাকা সত্ত্বেও ‘ঢুস'(*) নিলো, কিংবা নাকেরে ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪) [৮]. কুল্লী করছিলো । অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কন্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলো। কিংবা নাকে পানি দিলো; কিন্তু তা মগজে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি রোযাদার হবার কথা ভুলে গিয়ে থাকে, তবে রোযা ভাঙ্গবে না।যদিও তা ইচ্ছাকৃত হয়। অনুরুপভাবে রোযাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কন্ঠে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।(আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৭৮)। [৯]. ঘুমান্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললো, অথবা মুখ খোলা ছিলো; পানির ফোঁটা কিংবা বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি কন্ঠে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল-জাওয়াহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম,পৃ-১৭৮)। [১০]. অন্য কারো থুথু গিলে ফেললো। কিংবা নিজেরই থুথু হাতে নেয়ার পর গিলে ফেললো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩) [১১]. যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতরে মওজুদ থাকে। তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না। বারংবার থুথু ফেলতে থাকা জরুরী নয়। [১২]. মুখে রঙ্গিন সূতা ইত্যাদি রাখার ফলে থুথু রঙ্গিন হয়ে গেলো। তার পর ওই রঙ্গিন থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম,পৃ-২০৩) [১৩]. চোখের পানি মুখের ভিতরে চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললেন। যদি এক/দু’ ফোটা হয় তবে রোযা ভাঙ্গবে না। আর যদি বেশি হয়। যারফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভুত হয়। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ঘামেরও একই বিধান। (আলমগীরী, খন্ড-১ পৃ-২০৩)। [১৪]. মলদ্বার বের হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় বিধান হচ্ছে, তখন ভাল করে কোন কাপর ইত্যাদি দিয়ে তা মুছে পেলার পর দাঁড়াবে যাতে সিক্ততা বাকী না থাকে। আর যদি কিছু পানি অবশিষ্ট ছিলো, আর দাঁড়িয়ে গেলো, যার কারণে পানি ভিতরে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এ কারণে সম্মানিত ফকীহগণ (রাহিমুল্লাহু তা’আলা) বলেন, “রোযাদার পানি ব্যবহারের সময় নিবে না। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪)।
পবিত্র মাহে রমজানের সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি :-
আসতেছে অপেক্ষা করুন ২০২০